
যৌথ পরিবারে শিশুপালন
যৌথ পরিবারে শিশুপালন
যৌথ পরিবারে শিশুপালন মানেই কেবল ভালোবাসা নয় — বরং দায়িত্ব, শৃঙ্খলা এবং সমন্বয়ের শিক্ষা। শিশু যেন নিয়ম শিখে, ভালোবাসা পায়, আবার আত্মনিয়ন্ত্রণও গড়ে তোলে — সেজন্য মা-বাবা এবং দাদা-দাদীদের একই পথে হাঁটতে হবে। একই ছাদের নিচে নানা প্রজন্ম একসাথে বসবাস করে — দাদা-দাদী, মা-বাবা, চাচা-চাচী, ভাইবোন। এতে ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ আর পারস্পরিক সহযোগিতার বন্ধন অনেক দৃঢ় হয়। কিন্তু, যখন বিষয় আসে শিশুপালনের, তখন কিছু জটিলতা সামনে চলে আসে — বিশেষ করে শৃঙ্খলা রক্ষা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে।
✅কেন সমস্যা তৈরি হয়?
যৌথ পরিবারে প্রতিটি সদস্য শিশুর প্রতি ভালোবাসা দেখাতে চায়। কেউ খেলা শেখায়, কেউ গল্প বলে, আবার কেউ চকলেট বা মোবাইল দিয়ে শিশুকে খুশি করে। কিন্তু সব ভালোবাসা সবসময় উপকারে আসে না। উল্টো বাচ্চার জন্য অনেক ক্ষতিকর। একজন মা যদি বলেন, “আজ মোবাইল নয়”, আর দাদু বলেন, “এতো কিছুর কি দরকার, দে দেখি দেখুক একটু!”, তাহলে শিশু বুঝে যায় — “আমি চাইলে দাদুর কাছে গিয়ে জিততে পারি।” এভাবেই শিশুর মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এই সমস্যার পেছনে একধরনের “পাওয়ার স্ট্রাগল” কাজ করে। অনেকে মনে করেন শিশুর মন জয় করতে পারলেই তার ভালোবাসা পাওয়া যাবে। বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যরা নিজেরা পরিবারে উপযোগিতা হারিয়ে ফেলেছেন মনে করে, শিশুর মাধ্যমে তাদের প্রভাব বজায় রাখতে চান। তারা ভাবেন, শিশুর পছন্দের কিছু (চকলেট, মোবাইল, আইসক্রিম) দিয়ে যদি সে খুশি হয়, তাহলে সে তাদের কাছে থাকবে, ভালোবাসবে।
⚠️ সমস্যা কী কী হতে পারে?
❌ শিশুর মধ্যে নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে যায়
❌ গড়ে ওঠে সুবিধাবাদী মনোভাব
❌ শেখে কাকে কীভাবে ম্যানিপুলেট করতে হয়
❌ আত্মবিশ্বাস কমে যায়, তৈরি হয় ভেতরের দ্বন্দ্ব
✅ সমাধান কীভাবে সম্ভব?
১.অভিভাবকদের মধ্যে একমত হওয়া জরুরি — “একক parenting strategy”।
২.সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সবার মতামত নিলেও, প্রয়োগে একজন বা দুইজনকে মুখ্য করে রাখা ভালো।
৩.নিয়ম নির্ধারণে একতা রাখুন
শিশুর সামনে সবাই যেন একই নিয়মে চলেন। যদি চকলেট না খাওয়ার নিয়ম হয়, সেটা মা-বাবা এবং দাদা-দাদী সবাই মেনে চলবেন। এই একতা শিশুর মনে নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধা গড়ে তোলে।
৪.খোলামেলা আলোচনা করুন
পারিবারিকভাবে নিয়মিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতভেদ দূর করুন। শিশুর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিন। কারো সিদ্ধান্তে ভুল থাকলেও তা সুন্দরভাবে বোঝাতে হবে, শিশুর সামনে কখনোই দ্বন্দ্ব প্রকাশ করা যাবে না।
৫.বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান দিয়ে বোঝান
তাদের বয়স হয়েছে, ভুল করতেই পারেন — কিন্তু কখনো তাদের সাথে রূঢ় আচরণ করা যাবে না। কারণ আপনি যেমন তাদের সাথে আচরণ করছেন, আপনার সন্তানও সেটা দেখে শিখবে।
৬. বাবার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
দাদা-দাদী এবং মায়ের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করার দায়িত্ব বাবার। অনেক সময় মায়ের কথা দাদা-দাদীরা বিরক্ত হয়ে এড়িয়ে যান, কিন্তু ছেলে হিসেবে বাবা যদি সম্মানের সাথে কথা বলেন, তারা সেটা গুরুত্বের সাথে নেন।
🧔♂️ বাবা বলতে পারেন:
🔹 “আমি জানি, আপনি নাতনিকে খুশি করতে চান — আমরাও চাই। কিন্তু নিয়মের ব্যাপারগুলো আমরা একসাথে মেনে চললে ওর ভবিষ্যতের জন্য ভালো হয়।”
🔹 “ও যখন একেকবার একেক রকম নির্দেশ পায়, তখন খুব বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। আমরা যদি একসাথে সিদ্ধান্ত নিই, ওর বেড়ে ওঠাটা সহজ হবে।”
🔹 “আপনার ভালোবাসা ওর জন্য অনেক বড় আশীর্বাদ। যদি আপনি আমাদের শাসনকে সমর্থন করেন, ও বুঝবে পরিবারের সবাই একই কথা বলে — এতে ও নিরাপদ বোধ করবে।”
🔹 আমরা চাই ছেলে/মেয়েটা আপনার মতো শৃঙ্খলিত হোক। আপনার সহযোগিতা চাই।
🔹 “আমরা দুজন একসাথে ওর সামনে একই বার্তা দিই। এতে ও বুঝবে কী ঠিক, কী ভুল।”
✅ লক্ষ্য:
• সম্মান বজায় রেখে বোঝানো
• শিশুর সর্বোচ্চ কল্যাণকে সামনে রাখা
সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে শিশুর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এক থাকে, তবে গড়ে উঠবে এমন এক প্রজন্ম যারা হবে দায়িত্বশীল, আত্মনিয়ন্ত্রিত এবং মূল্যবোধসম্পন্ন — ইন শা আল্লাহ।
বাচ্চারা বেশিরভাগ সময় দাদা-দাদির সাথেই থাকে।
যারা নানা-নানীদের সাথে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই এখানে নানা নানি আসবে।কিন্তু যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দাদা-দাদির কাছে থাকেন তাই এখানে তাদেরকে নিয়েই লেখা হয়েছে।এখানে নানা-নানী কে মেনশন করিনি বলে কেউ আমাকে আক্রমণ করতে আসবেন না প্লিজ🙏।